প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জীবন থেকে মানুষের বিভিন্ন জটিলতা দূর হয়েছে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এখন কয়েক মিলি সেকেন্ডেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সহজেই এখন যোগাযোগ করা যায়। তবে এই কাজগুলোর পেছনে অসংখ্য ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগ থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সী, চ্যানেল, ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করে দেয় রাউটার।
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তিপণ্য এই রাউটার। গৃহকোণ থেকে শুরু করে অফিস কিংবা কারখানা সবখানেই অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করছে এসব রাউটার। দেশে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন মানের রাউটার পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গেল ব্যান্ড, ডুয়াল ব্যান্ড বা ট্রাই-ব্যান্ডের রাউটার। মূলত ব্র্যান্ড, মডেল ও ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে এসব রাউটার। এ ক্ষেত্রে একক ব্যান্ডের তুলনায় বর্তমানে ডুয়াল-ব্যান্ড বা ট্রাই-ব্যান্ডের রাউটার বেশি কার্যকর। সে জন্য দেশে এ নেটওয়ার্কিং ডিভাইস রাউটারের আমদানি ও উৎপাদন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দেশে সিঙ্গেল ব্যান্ডের রাউটারের আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আগামী বছরের এপ্রিল থেকে একক ব্যান্ডের ওয়াইফাই রাউটার নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে।
২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে দেশের বাজারে যেসব ওয়াই-ফাই রাউটার বাজারজাত হবে, সেগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে ২ দশমিক ৪ থেকে ২ দশমিক ৪৮৩ গিগাহার্জ এবং ৫ দশমিক ৭২৫ থেকে ৫ দশমিক ৮৭৫ গিগাহার্জ, উভয় ব্যান্ড সাপোর্ট করতে হবে। এই দুটির মধ্যে একটিকে সাপোর্ট করে এমন ওয়াই-ফাই রাউটার বাজারজাত করা যাবে না। ফলে নিম্নমানের এবং কম ব্যান্ডের রাউটার বিদেশ থেকে আমদানি ও দেশে উৎপাদনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।
বিটিআরসির তরঙ্গ বিভাগের পরিচালক ড. মো. সোহেল রানা বলেন, সিঙ্গেল ব্যান্ডের রাউটারে স্পিড ভালো পাওয়া যায় না। তাই গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই এই রাউটারকে তুলে নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ডুয়েল ব্যান্ড রাউটার কিনতেও খুব বেশি খরচ বাড়বে না গ্রাহকদের। হয়তো এক দুইশ টাকার পার্থক্য হবে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পাবেন না এক ব্যান্ডের রাউটার আমদানিকারকরা।
বিটিআরসির এ ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ঘোষণার পক্ষে থাকা বিশ্লেষকরা বলছেন, আরো আগেই ডুয়াল-ব্যান্ড প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। উন্নত নেটওয়ার্ক সেবার পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে অঞ্চলে এ ধরনের রাউটারই বেশি কার্যকরী।
সমালোচকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য ইন্টারনেট সেবা পাওয়া আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামো প্রতিযোগিতামূলক রাখতে এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে একক ব্যান্ডকে ডুয়াল ব্যান্ড দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে স্বল্প আয়ের মানুষকে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দেওয়াটা জরুরি।
Sharing is caring!