অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর সন্দেহ আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “সন্দেহ কিন্তু আপনাদের ওপর আসতে শুরু করেছে। আমরা তো চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হব। আমরা চাই না শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আবার ফিরে আসুক।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশে গার্মেন্টস শিল্প, রেমিটেন্স , উচ্চ ফলনশীল ধানের সূচনা হয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছিলেন তিনি। কীভাবে আমরা তার অবদান ভুলি? তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্র একমাত্র রাস্তা। দেশকে ধ্বংসকারীরা তাকে হত্যা করল।”
বেগম খালেদা জিয়ার পার্লামেন্টারি গভঃমেন্ট ঘোষণার মধ্য দিয়েই স্বৈরাচার এরশাদকে সরানো গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা যখন কেয়ারটেকার গভঃমেন্ট বাতিল করলো, তখন আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। কেন পারলাম না? ১৫ বছর লড়াই সংগ্রাম করে আমরা তাকে সরাতে পারিনি। তবে ফাইনাল গোলটা কিন্তু ছেলেরা দিয়েছে। এটা তো স্বীকার করতেই হবে আমাদেরকে।”
‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা, গণতন্ত্রের জন্য স্পেস তৈরি করা বিএনপির অগ্রাধিকার (প্রায়োরিটি)’ উল্লেখ মির্জা ফখরুল বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা মাধ্যমেই আমরা সংস্কারের ৩১ দফা তুলে ধরেছি। এখন নতুন যারা আসছেন তারা একেকজন একেক কথা বলে যাচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তারা তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও নেই। রাজনীতি একটি সাইন্স এজন্যই তো বলা হয় পলিটিকাল সাইন্স। বিএনপি কি ক্ষমতাযর জন্য নির্বাচনের কথা বলছে? নো। দ্রুত নির্বাচন দিলেই দেশের অনেক সমস্যায় সমাধান হয়ে যাবে।”
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের ইন্টেলিজেন্সের ভিতরে তথ্য ছিল না? তারা কি এ ব্যবস্থা আগে নিতে পারতেন না? আসলে গভঃমেন্টটা এখনো স্ট্যাবল হতে পারেনি। তাই বলছি, নির্বাচন কমিশন ঠিক করে নির্বাচন দেন, একটি রোডম্যাপ ঘোষণা দেন, কবে কী করবেন জানান। তাহলে মানুষের মনে আস্থা আসবে।”
এসময় ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে অনেকে হতাশ হয়ে পড়েছেন’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, “অনেকে বলাবলি করেন, এজন্যই কি সংগ্রাম করেছি?”
“এতে করে আমাদের শত্রুরা সুযোগ নেবে”, বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, “সরকার থেকে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই , যেকোনো একদিকে ফোকাস দিন। পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন। বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচিত হয়ে যারা আসবেন তারা করবেন।”
ফখরুল বলেন, “নির্বাচিত হয়ে এলে আমরা একা দেশ চালাব না। একটি জাতীয় সরকার গড়ে, যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে ছিল তাদেরকে নিয়ে দেশ চালাব। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সন্দেহটা কোথায়?”
এসময় ‘সন্দেহ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আসতে শুরু করেছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষা কাঠামোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “৫৩ বছরে আমরা কী সাফল্য অর্জন করেছি শিক্ষাখাতে? বিশ্বের এক হাজার ইউনিভার্সিটির মধ্যে আমাদের একটি ইউনিভার্সিটি সিরিয়ালে আসে না। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি না । দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে শেখ হাসিনা। দেশের সকল অর্জন ১৫ বছর শেষ করেছে সে।”
তিনি বলেন, “আমাদেরকে কঠিন সময়ে ঐক্যের জায়গায় এক থাকতে হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএসপিপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. আজিজুল হক, ড্যাবের সভাপতি ড. হারুন আল রশীদ, প্রফেসর ড. আবু আহমেদ প্রমুখ।
Sharing is caring!