আজ শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ১৭ বছর ভারতকে শুধু দিয়েই গেছে: ডা. জাহিদ

admin
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ ১৭ বছর ভারতকে শুধু দিয়েই গেছে: ডা. জাহিদ

পতিত আওয়ামী স্বৈরচারের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে আছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, “ভারতের বিষয়ে দেশপ্রেমিক সব মানুষের বক্তব্য একই। ষড়যন্ত্র অনেক আগেই শুরু হয়েছে। তবে কারো শেষ রক্ষা হয়নি।”

বুধবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে ভারত সরকার ও মিডিয়ার অপপ্রচার এবং ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।

১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মুহাম্মদ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এম এ মান্নান। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার টুইটে যে মনোভাব প্রকাশ করেছেন সেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যে ষড়যন্ত্র রেসকোর্সে হয়েছিল সেটিই। গত ১৭ বছরে ভারতকে বাংলাদেশ শুধু দিয়েই গেছে। বলা হয়েছে বাংলাদেশ দিয়ে ভারত ট্রানজিট নিলে বাংলাদেশ নাকি সিঙ্গাপুর হবে? তাহলে আখাউড়া দিয়ে ভারতের এতো ট্রাক গেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি শুধু কমতেই আছে। বিগত বছরগুলোতে আমাদেরকে শুধু ভুল বোঝানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে দাঁড়িয়েছিল সেজন্য কৃতজ্ঞ। তবে বিগত বহু বছর তারা কড়ায় গন্ডায় প্রতিদান আদায় করেছে। আজো ফারাক্কার পানির সমস্যা নিরসন হয়নি। সীমান্তে মানুষ মারা হচ্ছে। ভারতের বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদশে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার সৃষ্টি করা হয়। তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়।”

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, “স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার বহু বছর পর হয়েছে। সুতরাং আগামীতেও সেরকম হবে না সেটি ভাবার কিছু নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) বাড়িঘর দখল ও গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। আল্লাহ তার বান্দাকে অবকাশ দেন যদি কেউ তার বুঝতে পারে। কিন্তু তা না হলে কী পরিণতি হয় সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতো পরিমাণ গুম খুন ও লুট করেও রক্ষা হয়নি। নিজেকে বাঁচার ভয়ে (সালমান এফ রহমান) নিজের দাড়ি কামিয়েছেন। অতএব অহংকার পতনের মূল। প্রত্যেকটা কাজের হিসাব কিন্তু আগামী প্রজন্মের কাছে দিতে হবে। কেউ হয়তো নেদারল্যান্ড গেছেন। কলকাতা গেছেন। কেউ চট করে ঢুকার চেষ্টা করছেন। সৎ সাহস থাকলে ঢুকেন বিচারের মুখোমুখি হোন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা রাষ্ট্র মেরামত করার লক্ষ্যে ৩১ দফা নিয়ে কাজ করছি। অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এরশাদের পতনের সময় কতদিন পর নির্বাচন হয়েছিল সেটি সবারই মনে থাকার কথা। নির্বাচন করতে কতদিন লাগে সেটি দেশের মানুষ জানে। যেহেতু পতিত স্বৈরাচার সরকার সাড়ে ১৫ বছরে দেশের সক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। সেজন্যই সব রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।”

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, “সব সংস্কার তো আপনারা করতে পারবেন না। কখন নির্বাচন হবে সেটা স্পষ্ট করুন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন একরকম। আবার তার প্রেস সচিব বলেন আরেক রকম। আপনাদেরকে তো আমরাই সবাই মিলে সহযোগিতা করছি। আপনারা কে কথা বলবেন দায়িত্ব নিয়ে বলুন। না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “স্বাধীনতার মাস ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের স্বাধীনতার গৌরব ছিনতাই করতে চায়। বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ যুদ্ধ করে অপরিসীম ত্যাগ শিকার করেছেন। আমরা নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যকে ঘৃণা করি, প্রত্যাখ্যান করি। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে সেটি কেউ বিনষ্ট করতে পারবেন না। আগামীতেও সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করবে ইনশাআল্লাহ।”

সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার শামিল। রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করলে আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পিছপা হবো না।”

বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “এই সরকারকে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যদি কোনো উপদেষ্টা কিংস পার্টি গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার কল্পনা করেন সেটি হবে ভুল চিন্তা। কারণ আমরা লড়াই করতে জানি। রাজপথে এখনো আছি।”

Sharing is caring!