গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে তিন আওয়ামী লীগ নেতা আগেই মারা গেছেন।
তারা হলেন- সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মমিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কামাল উদ্দিন এবং সদর উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ফরিদ।
গত ২ অক্টোবর (বুধবার) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় মামলাটি করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. এমরান। মামলার নথিপত্র ঘেঁটে এবং স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার এবং সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই বাবলুসহ ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
মামলার বাদী মো. এমরান হোসেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ভোলা সদর থানার শাহামাদার গ্রামের শাহাজানের ছেলে।
মৃত হাজি আবদুল মমিনের স্বজনরা জানান, হাজি আবদুল মমিন গত ২৪ জুন ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান। অথচ মামলায় তার (৩৩ নম্বর আসামি) বিরুদ্ধে ৪ আগস্ট আন্দোলনে হামলার ও ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার ছেলে আবু সাঈদ বলেন, বাবা কবর থেকে হামলা করেছেন, জেনে অবাক হয়েছি। তিনি তো জুনে মারা গেছেন। তাহলে কীভাবে ৪ আগস্ট হামলায় অংশ নিলেন? এগুলো নিয়ে কথা বলতেও ভালো লাগে না। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা উচিত।
কামাল উদ্দিন মজুমদারের (২৭ নম্বর আসামি) প্রতিবেশী আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের ১১ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কারও আপত্তির কিছু থাকবে না।
ওয়াহিদুর রহমান ফরিদের (৫৫ নম্বর আসামি) বড় ছেলে মো. ফরহাদ বলেন, কিডনিজনিত সমস্যায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাবা মারা যান। এক বছর পরের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। মৃত মানুষ কী করে হামলা করবেন, আসামি হবেন? এটি চরম অন্যায়।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, শুধু তিন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা নয়, কানাডা ও যুক্তরাজ্য অবস্থানরতসহ বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দেশের অনেক অসুস্থ ব্যক্তিদেরও এই মামলার আসামি করা হয়েছে।
বাদী এমরান বলেন, অভিযোগ ঠিক আছে। তবে শুরুতে আসামিদের নাম শনাক্তে ভুল আছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে পারিনি। বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখব।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, এফআইআর মামলার প্রাথমিক পদক্ষেপ। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। মৃত ব্যক্তির নাম থাকলে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০৫ অক্টোবর ২০২৪
Sharing is caring!