খুলনা নগরীর শের-ই-বাংলা রোডের নাম ফলকবিহীন একটি বাড়ি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি এটি। এ বাড়ির পাঁচ ছেলের নিয়ন্ত্রণে ছিল খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। তাঁদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে টিকতে পারেননি নিজ দলের অনেক নেতা-কর্মীরাও।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনার শেখ বাড়িতে তাণ্ডব চালায় স্থানীয় মানুষ। বাড়িটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখানে থাকতেন শেখ হেলালসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ চাচাতো ভাই আর শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়।
১৬ বছরে তিন জন এমপির বাসস্থান হওয়ায়, এই বাড়িটি হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক কমিটির পদ আর নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য চলত এখানে।
জলমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান বলেন, ‘হেলাল সাহেবের নেতৃত্বে ওনারা আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁদের মনোনীত প্রার্থী বিধান রেখে এখানে তারা আমাকে সমর্থন করে।’
শেখ পরিবারের পাঁচ ভাই ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নামে রয়েছে ১০০টির মতো জাহাজ। খুলনা নৌ পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষ পদ ২০১১ সাল থেকে ছিল তাদের দখলে। এ ছাড়া খুলনা অঞ্চলের সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদা না দিয়ে কোনো ঠিকাদারই কাজ করতে পারতেন না।
নৌ ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান খান পল্টু বলেন, ‘আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী অন্য জাহাজ থেকে জিনিস সংগ্রহ করতাম। তবে তাঁদের কার্গো যদি না আসত তাহলে দুই থেকে চারটি কার্গো তাঁরা ক্যারিয়ারের মাধ্যমে নিতেন। কিন্তু ঘাটে এলে অতি উৎসাহী কিছু লোক আমরা বলার আগেই তাঁদের কার্গো খালি করতে ব্যস্ত হয়ে যেত।’
ভুক্তভোগী ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, শেখ পরিবারকে চাঁদা না দিয়ে খুলনায় কেউ ব্যবসা করতে পারে না। এলজিইডি, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পিডব্লিউডি সবই ছিল তাঁদের নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে এই পরিবারের বিরুদ্ধে। তাঁদের টাকা না দেওয়ায়, সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য বাবুল হাওলাদার বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বা আইনের শাসন, সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এই পরিবারের একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
৫ আগস্টের পর থেকে শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের খোঁজ নেই। খুলনা, বাগেরহাটের বিভিন্ন থানায়, এরইমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।
Sharing is caring!